আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ব্রিটেনের রাজপরিবারের কাছে আছে এক বহুমূল্য হীরে। সর্বশেষ ব্রিটিশ নিলাম ঘরের তথ্যানুযায়ী ওই হীরের দাম আনুমানিক একশ মিলিয়ন ডলার। নিয়ম অনুযায়ী, ইংল্যান্ডের রাজা বা রানীই হন ওই বহুমূল্য হীরের উত্তরাধিকারসূত্রে মালিক। সেই হিসেবে বর্তমানে হীরেটির মালিক রানী এলিজাবেথ দ্বিতীয়। কিন্তু আর হয়তো বেশিদিন ওই হীরে নিজেদের অধিকারে রাখতে পারবেন না ব্রিটিশ রাজপরিবার। কারণ কিছুদিন আগেই ভারতীয় এক ব্যবসায়ি লন্ডনের উচ্চ আদালতে ইংল্যান্ডের রানীর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছেন এই মর্মে যে, ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের কাছে থাকা হীরেটি মূলত ভারতের এবং ব্রিটিশরা সেই হীরে চুরি করে নিয়ে যায়।
ভারতীয় ওই ব্যবসায়ি এবং বলিউড তারকাদের দাবি যে, ব্রিটিশ সরকারের উচিত অনতিবিলম্বে ওই ১০৫ ক্যারেটের হীরেটি ভারত সরকারকে দিয়ে দেয়া। কারণ হীরেটির আসলে তার নিজ দেশেই থাকা উচিত। কিন্তু মজার বিষয় হলো, ওই মামলাটি এমন এক সময়েই করা হয় যখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশেষ আমন্ত্রনে খোদ বাকিংহ্যাম প্যালেসে অবস্থান করছিলেন। যদিও ব্রিটিশ রাজকীয় সূত্র জানায়, ওই মামলা অনুষ্ঠানের উপর কোনো প্রভাব ফেলেনি।
১০৫ ক্যারেটের ওই হীরেটির নাম আসলে কোহিনূর। কিংবদন্তী আছে, কোহিনূর হীরে একমাত্র দেবতা কিংবা কোনো নারীই পরিধান করতে পারে। ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলে ওই হীরেটি চুরি করে নিয়ে যায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একাংশ। ডেভিড ডি সুজা নামের এক ভারতীয় এই মামলার খরচ এবং প্রচার প্রচারণায় রয়েছেন। তার মতে, ‘ভারত থেকে লুট করে নিয়ে যাওয়া অনেক পুরাকৃত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে কোহিনূর অন্যতম। ভারতের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার জন্যই ব্রিটিশরা ওই সম্পদ লুট করেছিল।’
এবিষয়ে বলিউড তারকা ভূমিকা সিং বলেন, ‘কোহিনূর শুধুমাত্র ১০৫ ক্যারেটের একটি হীরেই নয়। এটা আমাদের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির অংশ, সন্দেহাতীতভাবেই একে আমাদের দেশে ফিরিয়ে আনা দরকার।’ ১৮৫১ সালে ভারত থেকে লুট করা ওই হীরে তৎকালীন রানী ভিক্টোরিয়াকে উপহার দেয়া হয়েছিল। এরপর থেকে যতবারই হীরেটি ভারতের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কথা হয়েছে, ততবারই সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাজ্য।
ভারতীয়দের করা নতুন মামলার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই ঢাল তলোয়ারে শান দিয়ে বসেছে ব্রিটেনের ঐতিহাসিক থেকে বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দেখিয়ে তারা প্রমাণ করবার চেষ্টা করছেন যে, ভারত এবং ব্রিটিশ সরকারের মধ্যকার চুক্তি মোতাবেকই ওই হীরেটি ব্রিটেনে পাঠানো হয়। তবে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, কোহিনূর হীরের দাবিদার শুধুই ভারত নয়। পাকিস্তান, ইরান এবং আফগানিস্তানও ওই হীরেকে নিজেদের বলে দাবি করেন। কারণ ভারতে মোঘল দরবারে ঠিক কিভাবে ওই হীরেটি এসেছিল তা সঠিক করে বলা যায় না।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশরা জার্মানির এবং পোল্যান্ডের অনেক মূল্যবান সম্পদ লুট করেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জার্মানি এবং পোল্যান্ডের মামলার প্রেক্ষিতে অনেক লুটকৃত সম্পদ ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় ব্রিটেন। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতীয় আইনজীবিরা এরকম অনেকগুলো মামলাকে আমলে এনেই চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হবেন। কারণ শুধু ‘ট্রেসপাস টু গুডস’ ধারায় মামলা করলে ভারতের পক্ষে ওই হীরে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতের ধারা অনুযায়ী ব্রিটেনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দাড় করিয়ে মামলা করলে কোহিনূর ভারতে ফিরে যাবার সম্ভাবনা রয়ে যায় বলে মনে করেন অনেক জাদরেল ঐতিহাসিক।